তারাবি নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া, ফজিলত ও বিভিন্ন টিপস

তারাবি নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া, এবং বিভিন্ন ফজিলত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে এই পোষ্টটির ভিতরে। এখানে আপনি জানতে পারবেন মহানবী সা: কিভাবে তার উম্মতের গিয়ে শিক্ষা দিয়েছেন তারাবির নামাজ পড়ার জন্য সে শিক্ষা এখনো প্রত্যেকটি মুসলমানের বুকে থাকেন।

তারাবি নামাজের নিয়ম

পবিত্র রমজান মাসের শুরুর দিন থেকে শুরু হয় এই নামাজ আদায়। পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তারাবির নামাজ পড়ানোর সময়। প্রতিবছর এই সম্মানিত মাসটি সকল মুসলমানেরা উদযাপন করে। কারণ এই মাসে সবচাইতে বেশি ফজিলত ও রহমত বর্ষিত হয়। 

পোস্ট সুচিপুত্রঃ তারাবি নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া, ফজিলত ও বিভিন্ন টিপসে যা জানবেন

তারাবি নামাজের নিয়ম জেনে নিন  

তারাবি নামাজের নিয়ম জেনে আপনি সঠিক উপায়ে নামাজ পড়লে অশেষ সওয়াব হাসিল করতে পারবেন এবং জান্নাতে যাওয়ার জন্য যে আমলগুলো সবচাইতে উপকারী তার মধ্যে তারাবি নামাজ কে বিবেচনা করা হয়। যদিও তারাবির নামাজ না পড়লে রোজা নষ্ট হয় না। যদি সেই ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে সেই নামাজ ত্যাগ না করে। প্রত্যেক বছর একটি মাস তারাবির নামাজ আদায় করা হয়। 

সারা বছরের মধ্যে এই একটি মাসকে অনেক ফজিলতময় এবং রহমত পূর্ণ মাস হিসেবে আল্লাহতালা উপহার দিয়েছেন তার বান্দাদের জন্য যাতে মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতেরা ইবাদত বন্দি কি করে আল্লাহর নৈকত অর্জন করতে পারে। সঠিক ইবাদত করার জন্য আমাদেরকে জানতে হবে সঠিক নামাজের নিয়ম তাহলে চলুন জেনে এই তারাবির নামাজের নিয়ম সঠিক উপায়ে কিভাবে পড়তে হয় সে বিষয়ে বিস্তারিতভবে।

এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বেতের নামাজের আগে দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়। এই নামাজকে তারাবি নামাজ বলে বিবেচনা করা হয়। রমজান মাসের ফজিলত কি আরো বৃদ্ধি করে দেয় এ তারাবির নামাজ। হ্যাঁ, সত্যি রমজান মাসের অনুষঙ্গ তারাবি সালাত এ মাসে আল্লাহর নিকটত্ব পাওয়ার জন্য বিশেষ নেয়ামত রহমত এবং বরকত বর্ষিত হয়।  

তারাবি শব্দটি একটি আরবি পরিভাষা যার অর্থ আরাম করা বা বিশ্রাম করা বা ধীরে ধীরে স্বাচ্ছন্দ বোধ করা ইত্যাদি। তারাবির নামাজের ফাঁকে মানুষ কিছু সময় বিশ্রাম নেয় এবং বিভিন্ন তসবি ও দোয়া দুরুদ পাঠ করেন। এছাড়াও তারাবির নামাজ ২০ রাকাত আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। এছাড়া ওয়াজিবের কাছাকাছি ফজিলত পাওয়া যায়, আমাদের দেশে দুই ধরনের তারাবি প্রচলিত আছে একটি হল সুরা তারাবি একটি হলো খতম তারাবি। 

সূরা তারাবি হচ্ছে পবিত্র কোরআনের যে কোন সূরা দিয়ে 20 রাকাত নামাজ আদায় করা। আর খতম তারাবি হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান মাসে সম্পূর্ণ কুরআনকে খতম দেওয়ার মাধ্যমে তারাবি আদায় করা। এছাড়াও আরো একটি যে বিষয়ে প্রচলিত আছে সেটি হচ্ছে কেউ তারাবির নামাজ 20 রাকাত পড়ে। আবার তারাবির নামাজ কেউ কেউ আট রাকাত পড়েন। কিন্তু সবাই তারাবির নামাজ আদায় করেন। 

বিভিন্ন হাদিস শরীফ থেকে পাওয়া গেছে হযরত মাওলা আলী তার আমলে 20 রাকাত তারাবির নামাজ পড়াতেন। আপনি তারাবির নামাজ যেভাবে পড়বেন সংক্ষিপ্ত বিবরণ হচ্ছে, তারাবি দুই রাকাত নামাজ আদায় করে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করে আবার দুই রাকাত নামাজ পড়া। এভাবে চার রাকাত নামাজ পড়ার পর একটু সময় বিশ্রাম নেয়া এবং বিশ্রামের সময় তসবি পাঠ করতে পারবেন, দোয়া দুরুদ পড়তে পারবেন, আল্লাহর জিকির করতে পারবেন। 

কারো যদি মুরশিদ থাকে তাহলে সে মুর্শিদের ধ্যান করতে পারবেন। যারা আহলে বায়াতের অনুসারী তারা মুর্শিদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন এবং তাদের ইবাদত বন্দেগী করার জন্য আপন মুর্শিদের পরামর্শে ইবাদত বন্দেগী করে থাকেন। দৃষ্টিকোণ থেকে যাদের মুর্শিদ রয়েছে তারা নামাজের ফাতে ফাঁকে বিশ্রামের সময় মুর্শিদের ধ্যান করতে পারবেন। বিভিন্ন অলি-আউলিয়া কাউস কুতুব এ ধরনের ইবাদত বন্দি করেন এমন অনেক প্রমাণ এবং দলিল রয়েছে। সবচাইতে বড় প্রমাণ হচ্ছে মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমির মাসনবী শরীফ ইসলামিক মানুষের কাছে অনেক প্রিয়। 

তারাবি নামাজের নিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন 

তারাবি নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে সেই নিয়ম অনুযায়ী তারাবির নামাজ আদায় করতে পারবেন। মক্কা মদিনার ভাষা হচ্ছিল আরবি যেহেতু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেহেতু তার ভাষাও ছিল আরবি। আর তিনি আরবি ভাষায় আল্লাহর নিদর্শন গুলো উম্মতের জন্য প্রকাশ করে গেছেন। তাই আরবি ভাষায় নিয়ত করলে বেশি সওয়াব বা কম সওয়াব এমন কোন হাদিস দলিল নেই। 

তাই আপনি ইচ্ছা করলে তরাবি নামাজের নিয়ত বাংলা এবং আরবি উভয় ভাষা ব্যবহার করে পড়তে পারেন। তাহলে চলুন জানি প্রথমে আরবিতে কি জানি, নাওয়াইতু আন ওসালিয়া লিল্লাহি তাআলা, মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার। এটা হল আরবি দোয়া বাংলায় উচ্চারণ অনেকে আরবি ভাষা পড়তে পারে না তারাও এই দোয়াটি পড়ার মাধ্যমে নিয়ত করতে পারবে। 

আরো পড়ুনঃ শবে কদরের নামাজের নিয়ম অনুযায়ী আমল করার ১০টি টিপস 

বাংলায় তারাবি নামাজের নিয়ত হচ্ছে, আমি কেবলামুখী হয়ে দুই রাকাত তারাবির সুন্নতে মুয়াকাদাহ নামাজের নিয়ত করছি। ইমাম সাহেবের সাথে পড়লে বলতে হবে। আমি কেবলাম কি হয়ে ইমাম সাহেবের পিছনে দুই রাকাত তারাবির সুন্নতে ময়াকাদাহ নামাজের নিয়ত করছি আল্লাহু আকবার। এভাবে আপনি নিয়ত করে নামাজ আদায় করতে পারেন একা অথবা জামাকে ইমাম সাহেবের সাথে যুক্ত হয়ে সবাই একসাথে। 

এছাড়া আপনি শুধুমাত্র বাংলা ভাষাতেই তারাবি নামাজের নিয়ত করতে পারবেন। আপনাকে বলতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তারাবির দুই রাকাত নামাজ কেবলামুখী হয়ে আদায় করছি। আল্লাহতালা প্রত্যেকটি মানুষের বোনের অবস্থান বুঝতে পারে এবং কে কোন নিয়াতে আল্লাহর কাছে ইবাদত করছে আল্লাহতালা খুব সহজেই বুঝতে পারে মুখ দেখতে পায় তাই আপনি যেই নিয়তেই আল্লাহর কাছে ইবাদত করো না কেন নি আর যদি সঠিক হয় তাহলে ইবাদত গ্রহণযোগ্য অবশ্যই আল্লাহতালার কাছে।

তারাবি নামাজের দোয়া জেনে আমল করুন  

তারাবি নামাজের দোয়া জেনে আমল করলে আপনার কাছে সহজ হয়ে যাবে তারাবির নামাজ আদায় করা এবং বিভিন্ন দোয়া কালাম পড়ে কিভাবে সঠিক উপায় আল্লাহর পাওয়া যায় সে সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আরো কি দোয়া পড়ে এই তারাবির নামাজ পড়তে হয় তা সকল বিষয় সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জানাবো। তারাবি নামাজের দোয়া জানা থাকলে আপন তারাবি নামাজের সময় যে বিশ্রাম নেওয়া হয় তখন পাঠ করতে পারবেন। 

আরবি ভাষায় যেই দোয়াটি প্রচলিত আছে তা বাংলায় আপনাদের দেশের অনুগত স্থাপন করলাম যেন যারা আরবি পারে না তারাও যেন পড়তে পারেন, সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা যিল ইয়াতি ওয়াল আজমাতি ওয়াল হাইবাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ী ওয়াল ঝাবারুটি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়িল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া। লা ইয়ামুত অবদান আবাদ; সুব্বুহুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাটি ওয়ার রূহ।

একটা কথা বলে রাখা ভালো যে নামাজের সাথে এই দোয়ার কোন সম্পর্ক নেই কারণ যে দোয়াটি না পড়েও তারাবির নামাজ পড়তে পারবেন এরকম অনেক হাদিস দলিল রয়েছে। তারাবির নামাজে কোরআন থেকে যেকোনো ধরনের সূরা পাঠ করা যাবে অথবা কোরআনের সম্পূর্ণ সূরাগুলো খতম দেয়ার মাধ্যমে এক মাসে তারাবি খতম তারাবি নামাজ করতে পারবেন। 

তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল ইবাদত 

তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফলত সে সম্পর্কে অনেকেই অনেক রকমের মতামত প্রদর্শন করেন এবং বর্তমানে এই মতামত প্রদর্শন করার কারণে অনেক ধরনের মানুষ রয়েছে যারা বিভিন্ন মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে গেছে। আসলে আমাদেরকে জানা উচিত যে তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল সেই বিষয়ে বিস্তারিত এবং সঠিক তথ্য যে অনুযায়ী আমরা আমল করতে পারবো। রমজান মাসে এই নামাজের মাধ্যম মানুষইবাদত বন্দি কি করে থাকেন এবং আল্লাহতলার কাছে মাফ চেয়ে থাকেন।

তারাবি হলো রাতের একটি বিশেষ সুন্নত নামাজ যেটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু তার উম্মতের জন্য আল্লাহতালার কাছ থেকে রহমত হিসেবে নিয়ে এসেছেন। রমজান মাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সারা মাস এশার নামাজের শেষে তারাবির নামাজ সংঘটিত হয় এবং প্রত্যেকটা মুসললি নামাজে অংশগ্রহণ করে এবং অশেষ সওয়াব হাসিল করে নেয়। এশার নামাজ শেষ করে তারাবির নামাজ পড়তে হয় এবং সবশেষে বেতের নামাজ পড়ে নামাজ শেষ করে। 

আরো পড়ুনঃ শবে বরাত ২০২৫ কত তারিখে এবং নিয়ম দোয়া এবং ফজিলত 

তারাবির নামাজ হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা। রাসূলুল্লাহ সালাম নিজে তারাবি পড়েছেন এবং তার উম্মতের কে তারাবি পড়ার জন্য উপদেশ দিয়েছেন। প্রিয় রাসুল উপাধির পরে তার প্রিয় সাহাবারা যেই সময় শাসন আমল পালন করেছে সেই সময়ে তারাবির নামাজ পড়া হতো এবং এটা সুন্নতে মুয়াক্কাদা হিসেবেই বিশ্বাস করা হতো। নামাজের সময় চার রাকাত নামাজ পড়ার নিয়ত করে নামাজ পড়ে আবার ফাঁকি ফাঁকে বিশ্রাম নেই তাই এই নামাজ সালাতুত তারাবি নামাজ হিসেবে অবহিত করা হয়েছে। 

এশার তারাবির সালাত জোড়া জোড়া রাকাত করে যেকোনো জোড় সংখ্যক রাকাত তারাবি নামাজ পড়া হয়। প্রথমে এশার নামাজ পড়া হয় পরে তারাবির নামাজ এবং সর্বশেষ বেতের নামাজ পড়ে সেই নামাজ শেষ করা হয়। হাদিস শরীফের তারাবির নামাজের কোন নির্দিষ্ট যাকাত নির্ধারণ করা হয়নি বিভিন্ন ফেরায় বিশ্বাসী ইসলামী মানুষেরা বিভিন্নভাবে তা পড়ে থাকে। হানাফি সালাফিউ আম্বলী ফিতকার অনুসারে ২০ রাকাত পড়ে। মালিকি ফিকহের অনুসারী রাত ৩৬ রাকাত এবং আহলে হাদিস ৮ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করে। 

সচারচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন এবং উত্তর  

প্রশ্ন: তারাবি কি সুন্নতে ময়াক্কাদা?

উত্তর: তারাবি নামাজ সুন্নত মুয়াক্কাদা। তারাবি নামাজ এশার নামাজের পর বেতের নামাজের পূর্বে পড়তে হয়। আল্লাহতালা সন্তুষ্ট এবং নৈকট্য পাওয়ার জন্য তারাবির নামাজ পড়া প্রয়োজন বলে অনেকেই মনে করে। এবং আল্লাহতালা রমজানের রোজা রাখার সওযব এবং তারাবির পুরস্কার নিজ হাতে দান করবেন।

প্রশ্ন: তারাবির নামাজ পড়া কি বাধ্যতামূলক? 

উত্তর: তারাবির নামাজ হচ্ছে সুন্নতে মুয়াক্কাদা। কিন্তু রমজানের রোজা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত যা প্রত্যেকটি মানুষের উপর ফরজ আর তারাবির নামাজ মানুষের সুন্নত যেটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম প্রবর্তন করেছেন। তারাবির নামাজ না পড়লে রোজা হবে বলে ঘোষণা করেছে অনেক ওলামায়ে একরাম। 

প্রশ্ন: সৌদি আরবে তারাবি কত রাকাত? 

উত্তর: সৌদি আরবে তারাবি ২০ রাকাত পড়া হয় পরবর্তীতে এখন ১০ রাকাত পড়া হয় বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যয় সৌদি আরবে তারাবি সম্পর্কে বিস্তারিত।

প্রশ্ন: তারাবি না পড়লে কি গুনাহ হবে? 

উত্তর: তারাবির নামাজ না পড়লে রোজা মাকরুহও হবে না। এটা হচ্ছে মূল নির্দেশ। আল্লাহতালার পক্ষ থেকে বান্দার ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে এটা হচ্ছে বিধান। তারাবির নামাজ হচ্ছে সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এটা না পড়লে গুনাহ না হলেও সুস্থ থাকলে এবং কোন সমস্যা না থাকলে পড়া ভালো এতে অনেক ফজিলত রয়েছে। 

প্রশ্ন: পুরুষরা কি বাড়িতে তারাবির নামাজ পড়তে পারবে? 

উত্তর: যদিও জামাতে নামাজ আদায় করার সওয়াব বেশি কিন্তু কোন পুরুষদের ইচ্ছা করে বাড়িতে তার পরিবার পরিবারের সাথে জামাতে নামাজ আদায় করবে তা করতে পারবে জায়েজ আছে। 

তারাবি নামাজের মোনাজাত সম্পর্কে জেনে নিন 

তারাবি নামাজের মুল সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এই পোস্টটি পড়তে থাকুন এবং লিখিত তথ্যগুলো আপনার উপকারে আসবে যে উপকারিতা আপনার তারাবির নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কাজে লাগবে। আপনি যদি নিয়মিত তারাবি নামাজ আদায় করেন এবং তারাবির নামাজের মোনাজাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে জেনে নিন। প্রথমে আরবিতে বাংলা উচ্চারণ দিয়ে আপনাদের সামনে তারাবির মোনাজাত উপস্থাপন করলাম। 

তারাবি নামাজের মোনাজাত সম্পর্কে জেনে নিন

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাস আলুকাল জান্নাতা নাউজুবিল্লাহ মিনান্নার। ইয়া খলিকুল জান্নাতা ওয়ানানার। বিরহমাতিকা ইয়া আজিজু, ইয়া গাফফারু, ইয়া কারিমু, ইয়া সাত্তারু, ইয়া রাহিমু, ইয়া জাব্বারু, ইয়া খলিকু, ইয়া বারোর। আল্লাহুম্মা আজিরনা-মিনাননার। ইয়া মুজিরু, ইয়া মুজিরু, ইয়া মুজিরু। রাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।

পবিত্র মাহে রমজান মাসের তারাবির নামাজের এই দোয়াটি পড়ার মাধ্যমে আপনার গুনা খাতাগুলো মাফ করে নিতে পারবেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবেন। এই মাসে আল্লাহতালা জান্নাতের সকল দোয়ার খুলে দেন এবং আল্লাহর বান্দার জন্য অপেক্ষা করেন যে কি আল্লাহ তাআলার কাছে তার সন্তুষ্ট চাচ্ছেন এবং কে কি চাচ্ছেন তা পূরণ করে থাকেন। এই দিনে আল্লাহর রাসূল অনেক গভীরভাবে ইবাদত করতেন তাই আপনারাও গভীরভাবে অনুরোধ করে আল্লাহর একটু হাসিল করুন। 

এছাড়াও আল্লাহ তায়ালার কাছে আপনি বাংলা ভাষায় আপনার মনের সকল চাওয়া পাওয় গুলো উপস্থাপন করতে পারেন। আরবি না জানলেও এতে কোন সমস্যা নেই কারণ আল্লাহতালা সকল ভাষায় অবগত তিনি সকল ভাষা বুঝেন এবং প্রত্যেকটি মানুষের অন্তরের খবর জানেন কে কোন নিয়তে কি করছে তা তিনি স্পষ্ট দেখতে পান এবং বুঝতে পারেন। আল্লাহতালার কাছে সকল ভাষাতেই ইবাদত বন্দি  করা যায় এবং মোনাজাত করা যায়। 

আরো একটি দোয়া আপনি পাঠ করতে পারবেন তারাবির নামাজে সেটি হচ্ছে, আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাকতানি। ওয়ানা আবদুকা ওয়া আনা আ-লা আ-হদিকা ওয়া ওয়া দিকা মাস্ততাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা তু আবুউলাকা বিনি মাতিকা আলাইয়া, ওয়া আবুউ বিজাম্বি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা অনতা। তারাবি নামাজের  সময় ফাঁকে ফাঁকে এই দোয়া পড়তে পারবেন।

তারাবি নামাজের মোনাজাতের দোয়া সম্পর্কে কিছু কথা 

তারাবি নামাজের মোনাজাতের দোয়া সম্পর্কে আপনি যদি না জেনে থাকেন তাহলে এই পোস্টের সকল তথ্য গুলো ভালো করে জেনে নিতে পারেন তাহলে তারাবি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য এবং দোয়া। তারাবির নামাজের দোয়া টি উপরে উল্লেখ করা হয়েছে সেখান থেকে আপনি মুখস্ত করে নিতে পারেন নিয়ে আমল করতে পারেন। অনেক মানুষ আছে যারা তারাবির নামাজের মোনাজাত বাংলায় করে। 

আমার অনেক মানুষ বামন বি সাহেব রয়েছেন যারা তারাবির নামাজের দোয়া আরবিতে পড়ে। তারাবির নামাজের দোয়া আরবিতে পড়ুক অথবা বাংলায় পড়ে এতে কোন সমস্যা বা উপকার নেই কারণ আল্লাহ তায়ালার মানুষের নিয়তে দেখতে পান সঠিক নিয়তে যেই ভাষাতেই আল্লাহতালার কাছে ইবাদত করেন না কেন আল্লাহতালার কাছে সেই ইবাদত গ্রহণযোগ্য। যেহেতু আমি উপরে তারাবির নামাজের মোনাজাতের দোয়া নিয়ে আলোচনা করেছি।

আর পড়ুনঃ জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত মহিলা সাহাবীদের নাম এবং অর্থসহ কিছু ব্যখ্যা 

তাই আপনাদের সামনে তার বিস্তারিত মোনাজাতের বাংলা অর্থট একটু জানিয়ে রাখার চেষ্টা করি। মোনাজাদের বাংলা হচ্ছে , আমি ঘোষণা করছি পবিত্র আল্লাহ তাআলর, যিনি জগদীশ্বর, ফেরেশতাউজ জগতর প্রভু, প্রলয় সৃষ্টি স্থিতির পালনকর্তা এবং লালন কর্তা, সেই আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করছি যিনি বিরাট মহিমাময়, ভীতিপূর্ণ, শক্তিপূর্ণ, গৌরবময় এবং বৃহত্তর। বিশ্বের প্রতিপালকের কোন গান করছি। চিরঞ্জীব তিনি কোন ক্ষয় নেই এবং ধ্বংস নেই মৃত্যু নেই নিদ্রা নেই তিনি অসীম এবং অদ্বিতীয়।

তিনি পরিপূর্ণ আল্লাহ ছাড়া কোন উপাশাহ নেই তিনি কাউকে জন্ম দেয়নি এবং কেউ তাওকে তাকে জন্ম দেয়নি। আমরা আল্লাহতালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং ইহকালীর সকল গুনাহ খাতা মাফ করে পরকালে জান্নাতে যাওয়ার জন্য এবং আল্লাহ তাআলার মুক্তি এবং সন্তুষ্টিত অর্জন করার জন্য ইবাদত বন্দেগী করছি। তিনি আমাদের সকল কিছুর মালিক রিজিকদাতা মৃত্যু দাতা জন্মদাতা।

তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া জানুন 

তারাবি নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া যদি আপনি জেনে থাকেন তাহলে তারাবি নামাজের সময় যে চার রাকাত নামাজ পড়ে কিছু সময় থেমে থাকা হয় সেই সময়ে আপনি এই দোয়া গুলো পড়তে পারবেন এবং এখান থেকে অশেষ সওয়াব হাসিল করতে পারবেন। প্রত্যেক দুই রাকাত নামাজের শেষে সালাম ফিরানোর পর আপনি বিভিন্ন দোয়া কালাম পড়তে পারবেন যেমন দরুদ শরীফ পাঠ করতে পারবেন আল্লাহতালা জিকির করতে পারবেন ই ইসতেগফার করতে পারবেন।

তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া জানুন

আল্লাহতালা জিকির করতে পারবেনজর আল্লাহর অনেক পছন্দের একটি ইবাদত। এছাড়াও কুরআনের বিভিন্ন আয়াত পাঠ করতে পারবেন এবং কোরআনের কোন সূরা পাঠ করতে পারবেন। ইশরাফ আপনি যদি তারাবির নামাজের চার রাকাত শেষ হওয়ার পর পর কোন কিছু না পড়ে রেস্ট করেন তাদের কোন গোনা হবে বলে প্রমাণ নেই হাদিস শরীফে। কিন্তু আপনি যদি তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর সময় দোয়া কালাম এবং আল্লাহর জিকির করেন তাহলে অবশ্যই আপনার সওয়াব হবে।

এছাড়া বিভিন্ন হাদিস দলিল এবং বক্তাদের মধ্যে বিভিন্ন মতামত রয়েছে যে কিছু কিছু বক্তা এটা কে না করলেও কোন সমস্যা নেই বলে আখ্যায়িত করে না আবার কিছু কিছু বক্তা বলেছেন যে এটা করার মাধ্যমে অশেষ নেকি হাসিল করতে পারবেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবেন। অধিক পরিমাণ কাজ করলে যেমন বেশি বেতন পাওয়া যায় ঠিক তেমনই আল্লাহর বেশি ইবাদত করার ফলে আপনি অনেক পুর্ণ অর্জন করতে পারবেন।

তারাবি সর্বনিম্ন কত রাকাত নামাজ পড়া যায় জেনে রাখুন 

তার মধ্যে সর্বনিম্ন কত রাকাত নামাজ পড়া যায় এ ধরনের প্রশ্ন আমি কি করে থাকেন জানতে চান যে কি পরিমাণ নামাজ না পড়লে আল্লাহতালা গুনা দিবে এবং সর্বোচ্চ কত পরিমাণ নামাজ আদায় করতে পারবে তারাবির নামাজ আদায় করার সময়। রমজান মাসের সাধারণত তারাবির নামাজ পড়ে থাকে শপথ মানুষ যারা ইসলামের আকিদা অনুযায়ী নিজেরদেরকে চালিত করেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য। 

রমজান মাসের প্রথম রোজা থেকে শুরু করে শেষ রোজা পর্যন্ত আল্লাহতালার হুকুমে তারাবির নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা হিসেবে পালন করে থাকেন মুসল্লিরা। তারাবির নামাজের মধ্যে অনেক অনুসারী রয়েছে যারা সর্বোচ্চ ৩৬ রাকাত পর্যন্ত নামাজ আদায় করে। আর এই মুসলিম ধর্মের মধ্যে আহলে হাদিস রয়েছে যারা ৮ রাকাত তারাবির নামাজ পড়ে। অনেক হাদীস শরীফে রয়েছে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম সাহাবা একরাম দের কে নিয়ে তারাবির নামাজ ২০ রাকাত আদায় করতেন।

হযরত ওমর রাজেলা তালা আনহু এর আমল শাসনামলে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়া হতো। এবং উসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর শাসনামলে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করা হতো। (আসসনানুল কুবরা বাই হাকি ১/২৬৭-২৬৮) জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন ২৩ রাকাত নামাজ তারাপীঠ আদায় করা হয় হযরত ওমরের আমলে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক হাদিস: ৭৭৩৩) ২৩ রাকাতের ক্ষেত্রে ২৩ রাকাত তারাবি এবং তিন রাকাত বেতের হতো। 

হযরত মাওলা আলী আলাইহিস সালাতু সালাম এর শাসনামলে ২৩ টাকা তারাবির নামাজ আদায় করা হতো বলে অনেক হাদিস দলিল রয়েছে (সুনানুন বাইহাকী: ২/৪৯৬-৪৯৭/৪২৯১) এছাড়াও ইসলামের যে বিশিষ্ট চার খলিফা আছে তাদের শাসনামলেও ২৩ রাত করে নামাজ পড়া হয় বলে অনেক হাদিস দলিলে আলোচনা করা হয়েছে এবং বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আশা করি বোঝাতে পেরেছি তারাবির নামাজ কয় রাকাত পড়তে হয়।

তারাবি নামাজের নিয়ম নিয়ে আমার শেষ মন্তব্য 

তারাবি নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা রেখেছি যা থেকে আপনি বুঝতে পারবেন যে কি ধরনের আমল এবং উপায় অবলম্বন করার মাধ্যমে আপনি তারাবির নামাজ সম্পন্ন করবেন। এছাড়া কোন সময়ে তারাবির নামাজ পড়তে হয় এবং কি কি দোয়া পড়তে হয় সে সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি যেখান থেকে আপনি বুঝতে পারবেন যে তারাবির নামাজে কোন কোন দোয়া পড়তে হয় এবং কিভাবে পড়তে হয়। 

বিভিন্ন হাদিস এবং কোরআনে কি ধরনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারাবির নামাজ সম্পর্কে তা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করেছে আশা করি এই সকল বিষয় সম্পর্কে ভালো একটি ধারণা পেয়েছেন। এ ধারণা থেকে আপনি তারাবির নামাজ নিয়মিত পড়তে পারবেন রমজান মাসে এবং অশেষ সওয়াব হাসিল করে নিতে পারবেন ইহকাল এবং পরকালে আপনি শান্তি এবং সুখে বসবাস করতে পারবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মুক্তআঁখি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url