নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় - নবজাতকের বিলিরুবিন কমানোর উপায় জানুন
নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় কাজগুলো জানুন। কারণ নবজাতকের জন্ডিস বা বিভিন্ন রোগ হলে, তা ভালো করার জন্য নবজাতকের মায়ের যে বিষয় গুলো জানা উচিত। তা নবজাতকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং রোগ সারাতে সাহায্য করে।
সেজন্য আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি জেনে নিন। নবজাতকের জন্ডিস কতদিন থাকতে পারে। এবং নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়, এছাড়া শিশুদের জন্ডিস চিকিৎসায় কোনটি অপ্রয়োজনীয় বিস্তারিত জানতে পারবেন।
পোস্ট সুচিপত্রঃ নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় - বিলিরুবিন কমানোর উপায় জানুন
- নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় কাজ জানুন
- নবজাতকের জন্ডিসের লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার জানুন
- নবজাতকের জন্ডিস কতদিন থাকতে পারে জানুন
- নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয় জানুন
- নবজাতকের চোখ হলুদ হয় কেন জানুন
- নবজাতকের জন্ডিস হলে কি করব জানেন
- নবজাতকের জন্ডিসের স্বাভাবিক মাত্রা কত জানুন
- নবজাতকের জন্ডিসের টীকা সম্পর্কে জানুন
- নবজাতকের বিলিরুবিন কমানোর উপায় জানুন
- শিশুর জন্ডিস চিকিৎসায় কোনটি অপ্রয়োজনীয় জানুন
- নবজাতকের জন্ডিস নিয়ে সচরাচরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন এবং উত্তর
- নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় বিষয়ে শেষ মন্তব্য
নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় কাজ জানুন
নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় কাজ জানা থাকলে খুব সহজেই নবজাতকের জন্ডিস ভালো করতে পারবেন। কারণ নবজাতক অবুঝ সে তার অসুস্থতার বিষয়ে সচেতন নয়। তাই নবজাতকের মাকে তার সমস্ত দায়িত্ব নিতে হয়। আরো যে কাজগুলো করতে হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাজগুলো নিচে পর্যায়ক্রমে আপনাদের সামনে অবস্থান করলাম।
নবজাতকের জন্ডিস হলে মাকে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। এক ধরনের জন্ডিস আছে যা জন্মের সাধারণত দুই সপ্তাহের মধ্যে নবজাতকের মধ্যে প্রকাশ পায় এই জন্ডিসকে বলা হয় ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস। এ জন্ডিস তেমন ক্ষতিকর নয় তাই চিকিৎসার প্রয়োজন পরেনা। এখানে মায়ের দায়িত্ব হচ্ছে তা নিশ্চিন্ত হওয়া কোন জন্ডিস হয়েছে।
এছাড়া নবজাতকের মাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ফটোথেরাপি এবং এক্সচেঞ্জ ট্রান্সফিউশন চিকিৎসা নিতে হে পারে। রক্ত দ্বারা জন্ডিস হলে নবজাতকের শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা যায় যেমন, শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়া, সারা শরীর হলুদ বর্ণের হয়ে যাওয়া। আবার অনেক সময় দেখা যায় জন্মের পর বুকের দুধ খাওয়ানোর কারণে জন্ডিস দেখা যায়। তাই অবশ্যই সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, নবজাতকের জন্ডিসের লক্ষণ গুলো দেখা দিলে এক বাক্যে সর্বপ্রথম ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হয়।
নবজাতকের জন্ডিসের লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার জানুন
নবজাতকের জন্ডিসের লক্ষণ গুলো এবং এর যে কারণ আছে লক্ষণগুলো দেখা দেয়ার পেছনে। সেই বিষয়গুলো জানা উচিত সতর্কতা অবলম্বন করতে। লক্ষণগুলো আপনি চিহ্নিত করতে পারলে এর কারণগুলো জেনে সে কারণগুলো থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন। আপনি যদি লক্ষণ এবং কারণ জানেন তাহলে খুব সহজেই প্রতিকার এর ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
নবজাতকের জন্ডিসের লক্ষণঃ নবজাতকের জন্ডিস হলে যে লক্ষণগুলো দেখা যায় তার মধ্যে প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে সারা শরীর, মাথা, চোখ হাত-পা এমনকি চোখের যে সাদা অংশ রয়েছে তাও হলুদ হয়ে যাবে। এর জন্য যে সমস্যাগুলো শিশুদের মধ্যে দেখা যায় শিশুরা খাওয়াতে অমনযোগী বা খাওয়ানো যায় না কোনভাবেই। শিশুর ঘুমের পরিমাণ অতিরিক্ত হয়ে যায়, বাচ্চাদের মাঝে মাঝে জ্বর হয় এবং তীব্র আকার ধারণ করে। তারা শরীরের প্রচন্ড ব্যথায় বা যন্ত্রণায় কান্নাকাটি করে।
আরো পড়ুনঃ কোন কোন মাছে এলার্জি আছে - তেলাপিয়া মাছে কি এলার্জি আছে জানুন
নবজাতকের জন্ডিস হওয়ার কারণ সমূহ, অনেক শিশু আছে যারা পূর্ণ বয়স হওয়ার পূর্বেই জন্মগ্রহণ করে তাদের শরীর থেকে বিলিরুবিন অপসারণ করতে অক্ষম। যার ফলে তাদেরকে এইসব লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা দিতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে শিশু এবং মায়ের রক্তের গ্রুপ ভিন্ন হলে বুকের দুধ খাওয়ানোর ফলে মা এর শরীরের উৎপন্ন অ্যান্টিবডি শিশুর শরীরের লোহিত রক্ত কণিকা কে আক্রমণ করে। তাই দুধ খাওয়ানোর সমস্যা হলে আপনার শিশুর রক্তের গ্রুপ এবং আপনার রক্ত পরীক্ষা করতে হবে।
জেনেটিক সমস্যা থাকতে পারে লোহিত রক্তকণিকা কে দুর্বল করে তোলে যা কোষগুলো সহজে ভেঙে দেয় এর ফলে উচ্চ পরিমাণ বিলিরুবিন তৈরি হয়। এর থেকে অভ্যন্তরীণ রক্তপাত হয়, আবার লিভারের খারাপ কার্যকারিতা দেখা দেয়, পাশাপাশি শিশুদের রক্তে সংক্রমণ হয় এবং এনজাইমের ঘাটতি পড়ে। এ কারণ এবং লক্ষণ গুলো দেখেন তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে। যে বিলিরুবিনের মাত্রা ঠিক আছে কিনা।
জন্ডিসের চিকিৎসার পরামর্শকঃ জন্ডিস রয়েছে যেগুলো হালকা যা স্বাভাবিকভাবে ভালো হয়ে যায়। জন্ডিস হলে সে শিশুদের মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে বেশি করে। আর তরলের ঘাটতি হলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করার চেষ্টা করতে হবে। নবজাতকের বয়স কম হলে শুধু দুধ খেলে তাকে শুধু দুধ খাওয়াতে হয়। এছাড়া আপনি উন্নত মাধ্যমে কেমোথেরাপি ব্যবহার করতে পারেন যা জন্ডিসের জন্য উপকারী।
অনেক সময় এই ফটো থেরাপি কাজ করে না তখন তাদেরকে প্রক্রিয়া চলাকালিন বিলিরুবিনের পরিমাণ কমাতে শিশুর রক্তদাতা রক্ত দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। যাদের রক্তের গ্রুপ মায়ের গ্রুপের সাথে ভিন্ন নয় তাদের এই চিকিৎসা দেয়া হয় যেটাকে বলে আই ভি আই জি। আপনাকে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে এবং জন্মের পর যদি দুই সপ্তাহের বেশি জন্ডিস হয় তাহলে দ্রুত তার সাথে চিকিৎসা নিতে হবে।
নবজাতকের জন্ডিস কতদিন থাকতে পারে জানুন
নবজাতকের জন্ডিস কতদিন থাকতে পারে জানেন কি? সাধারণ নবজাতকের জন্মের পর দু সপ্তাহের মধ্যে জন্ডিস লক্ষণ দেখা দিলে আপনি যেই বিষয়গুলো লক্ষ্য করতে পারবেন। সাধারণত জন্মের পর এক ধরনের জন্ডিস রয়েছে যা দুই সপ্তাহের মধ্যে নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। আবার কিছু জন্ডিস রয়েছে ছোটদের ক্ষেত্রে প্রায় ১০ দিন স্থায়ী হয় এবং বিলিরুবিনের দ্রুত বৃদ্ধি করে।
তবে আপনার যদি নবজাতকের ফিজিওলজিক্যাল এর দ্বারা জন্মের এক থেকে দুই দিনের মধ্যে জন্ডিস হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবে ভালো হবে। কিন্তু এছাড়া যদি দুই সপ্তাহের মধ্যে এটা ভালো না হয় তাহলে অবশ্যই আপনাকে দ্রুততার সাথে মেডিকেলে ভর্তি থেকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। কারণ জন্ডিস মানুষের লিভারে আক্রান্ত হয় যার ফলে শরীর দুর্বল এবং হলুদ বর্ণের হয়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় মাদার হরলিক্স খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত জানুন
এছাড়া মাতৃদুগ্ধ জড়িত জন্ডিস হলে এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে শুরু হয় এবং তিন থেকে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে যা শিশুদের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয় তবে সচেতনতা এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তাই অবশ্যই আপনাকে দুই সপ্তাহের বেশি ধরে জন্ডিস লক্ষণ গুলো দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া আপনি বিভিন্ন বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন।
নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয় জানুন
নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয় এর সঠিক উত্তর হচ্ছে, একটি বিলিরুবিনের মাত্রা ৩৪ umol/L(২ mg/dL) এর বেশি দেখা দিতে পারে। তবে সুস্থ শিশুদের ক্ষেত্রে যখন মাত্রা ৩০৮ umol/L (১৮ mg/dL) এর বেশি হয়। এসময় জন্ডিস লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এ পর্যায়ে গেলে জন্ডিসের বিলিরুবিনের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এবং বিভিন্ন লক্ষণ স্বরূপ শরীরের মধ্যে দেখায় এবং আরো নানান প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা যদি ৫ মিলিগ্রাম/ ডিএল থাকে তাহলে তার স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়। এই মাত্রা অধিক অতিক্রম করলে তার থেকে সৃষ্টি হয় জন্ডিসের ভয়াবহ সমস্যা তাই অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। এছাড়া বিলিরুবিনের মাত্রা ১৪ মেগা গ্রাম/ডিএল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি এটা উল্লেখ হলে জন্ডিস হিসেবে ধরে নেওয়া হয় যা ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এ সময় আপনাকে ফটোথেরাপি চিকিৎসা নিতে হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ ইসবগুলের ভুষি ও তোকমা খাওয়ার ১২টি উপকারিতা জানুন
আবার জন্ডিস হলে রক্তে বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ১.০ mg/ dl(১৭ umol/L) এর নিচে, এর মাত্রা যখন ২-৩mg/dl ( ৩৪-৫১ umol/dl) এর বেশি হয় তখন জন্ডিস হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। আশা করি বুঝতে পেরেছেন নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস বলে বিবেচনা করা হয় এবং উপরে জন্ডিসের জন্য যে লক্ষণ এবং প্রতিকার ব্যবস্থা রয়েছে তা উল্লেখ করা হয়েছে আশা করি সেই বিষয়গুলো আপনি জেনেছেন।
নবজাতকের চোখ হলুদ হয় কেন জানুন
নবজাতকের চোখ হলুদ হয় কেন না জানলে তথ্যটা দেখুন। যা আপনার নবজাতকের চোখের হলুদ সমস্যা হলে কি কারনে হয় তা বুঝতে পারবেন। সাধারণত জন্মের পর দুই দিন থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে এক ধরনের জন্ডিসের লক্ষণ দেখা যায়। সেই সময়ে হালকা নবজাতকের চোখ হলুদ হতে পারে। এছাড়া সরাসরি বলতে গেলে যদি কোন শিশুর জন্ডিস হয় তাহলে তার চোখ এবং শরীর হলুদ হয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী জন্ডিস।
এ পর্যায়ে শিশুর রক্তে অতিরিক্ত বিলিরুবিনের উপস্থিতি দেখা যায় যার ফলে এটা হয়। রক্তে হলুদ পদার্থ যা লাল রক্তে কোষের ভাঙ্গনের কারণে আসে। যেসব মানুষের লিভারের সমস্যা রয়েছে তাদেরও এই লক্ষণ দেখা দেয় অথবা নবজাতকের ক্ষেত্রে রক্তের বিনিময়ে অপসারণ করতে না পারার ফলে এই সমস্যা দেখা দেয়। তাই অবশ্যই আপনাকে নবজাতকের চোখ হলুদ হলে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং চিকিৎসা নিতে হবে।
যে সকল নবজাতকের রক্তের গ্রুপ এবং তার মায়ের রক্তের গ্রুপের ভিতরে অমিল থাকে তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা গুলো দেখা দেয়। তাদের বিলিরুবিনের অতিরিক্ত মাত্রা শিশু রক্তের লাল কণিকা গুলো ভেঙে নতুন রূপে রক্ত তৈরি করে এর জন্য আপনার চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া সম্ভবনা থাকে পাশাপাশি আরো অনেক লক্ষণ যা উপরে উল্লেখ করেছি সেগুলো দেখা যায়।
নবজাতকের জন্ডিস হলে কি করব জানেন
নবজাতকের জন্ডিস হলে কি করব বুঝতে পারছি না, এই টেনশনে অনেকেই পড়ে। আর এই সমস্যাকে সহজ করার জন্য কিছু উপায় দেখানো হলো যা এই পোস্টে উপস্থাপন করেছি। এছাড়াও আপনি খেয়াল রাখবেন নবজাতকের জন্মের ২৪ ঘন্টার মধ্যে জন্ডিসের লক্ষণ গুলো দেখা দিলে বা তা যদি সাত থেকে ১০ দিনের পরেও থাকে সেই অবস্থায় আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। জন্ডিস হলে মানুষের নানান সমস্যা ও লক্ষণ দেখা যায়।
আরো পড়ুনঃ থাইরয়েড নরমাল কত পয়েন্ট জানুন বিস্তারিত
তবে শিশুদের ক্ষেত্রে লক্ষণ গুলো অন্যরকম বা একটু আলাদা হয়ে থাকে যেমন তারা খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়, অতিরিক্ত পরিমাণ ঘুমায়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি হয়ে যায়। তাই আপনাকে এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলতে হবে এবং তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করতে হবে এবং চিকিৎসা দিতে হবে।
নবজাতকের জন্ডিস হলে সবচাইতে গুরুত্ব দিতে হবে নবজাতকের মাকে। কারণ নবজাতকের মায়ের সচেতনতা খুব সহজেই নবজাতকের জন্ডিস সমস্যা ভালো করতে পারে। কারণ সবচাইতে বেশি কাছে এবং যত্ন নেওয়ার সময় তিনি সকল বিষয়গুলো লক্ষ্য করতে পারে। তাই নবজাতকের যদি জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিভিন্ন থেরাপি ব্যবস্থা রয়েছে সেগুলো গ্রহণ করতে হবে।
নবজাতকের জন্ডিসের স্বাভাবিক মাত্রা কত জানুন
নবজাতকের জন্ডিসের স্বাভাবিক মাত্রা কত তা জানা থাকলে আপনি খুব সহজেই নবজাতকের জন্ডিস আছে কি? সেটা বুঝতে পারবেন, বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করে। নবজাতকের সাধারণত ২৪ ঘন্টার মধ্যে এক ধরনের জন্ডিস হয় যে জন্ডিস হলে দুই সপ্তাহের মধ্যে নিজে নিজে ভালো হয়ে যায়। আপনার জানতে হবে নবজাতকের জন্ডিসের মাত্রা স্বাভাবিক থাকলে কত থাকে এবং এর বেশি কত হলে জন্ডিস বলে ধরা হয়।
আরো পড়ুনঃ কিডনি রোগী কি দুধ খেতে পারবে বিস্তারিত জানুন
নবজাতকের জন্ডিসের স্বাভাবিক মাত্রা বয়সের অনুযায়ী বিভিন্ন অনুপাতে হতে পারে যা নিচে দেওয়া হলো তবে, সাধারণত বিলিরুবিন এর মাত্রা ৫ এমজি/ডিএল হলে তার স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয় এর উপরে হলে বিশেষ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিচে নবজাতকের বয়স অনুযায়ী যে মাত্রা উল্লেখ করা হলো, সেগুলো আপনার জানা উচিত তাই দেখে নিতে পারেন।
নবজাতকের জন্ডিসের টীকা সম্পর্কে জানুন
নবজাতকের জন্ডিসের টিকা সম্পর্কে জানা উচিত। কারণ একজন নবজাতক জন্মগ্রহণ করার পর ২৪ ঘন্টা থেকে দুই সপ্তাহের ভিতরে যে কোন সময় জন্ডিস হতে পারে। আবার কিছু জন্ডিস রয়েছে যা এমনিতেই স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসে বা ভালো হয়ে যায়। নবজাতকের জন্য জন্ডিসের টিকা দেওয়ার জন্য আপনাকে দেড় মাস সময়ের মধ্যে দিতে হবে। জন্মের পরে কমবেশি শিশুদের ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস হয়ে থাকে যা দুই সপ্তাহের মধ্যে নিজে নিজে ভালো হয়ে যায়।
শিশুদের জন্ম ৪২ দিনের মধ্যে প্রথম ডোজ এবং ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ ও ৩য় ডোজ দিতে হয়। এছাড়াও যে সকল নবজাতক ৯ মাস পূর্ণ হলে প্রথম ডোজ এমআর টিকা দিতে হয়। তাছাড়া ১৫ বছর বয়সে সকল মহিলাদের আরএম টিকা দেওয়া হয়। এছাড়া শিশুদের ১৫ মাস বয়স থেকে ১৮ মাস বয়সের মধ্যে দ্বিতীয় হামের টিকা দেওয়া হয়। আশা করি বুঝতে পেরেছেন জন্ডিস হলে কখন টিকা দিতে হয়।
নবজাতকের বিলিরুবিন কমানোর উপায় জানুন
নবজাতকের বিলিরুবিন কমানোর উপায় ব্যবহার করা উচিত। অনেক সময় দেখা যায় নবজাতক এবং মায়ের রক্তের গ্রুপ ভিন্ন হলে বিলিরুবিনের মাত্রা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তাই আপনাকে সেই সময় বুকের দুধ খাওয়ানো থেকে দূরে থাকতে হবে। এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া অনেক মানুষ রক্তের বিলিরুবিন কমানোর জন্য ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনো গ্লোবুলিন ব্যবহার করা হয়।
যা গ্রহীত রক্ত কণিকাকে ভাঙ্গরতা কমাতে সাহায্য করে। রক্তের লাল রক্ত কণিকা গুলোকে ভেঙে নতুন কণিকায় রূপান্তর করতে বাধা দেয়। প্রতিরোধ করার জন্য আপনার শিশুকে হালকা রোদ দিতে হবে। শীতের দিন যেমন হালকা রোদ থাকে সেই রোদ। বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করাতে হবে। মায়ের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ বা বিপরীত থাকলে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা মায়ের জন্য এন্টিবডি দিয়ে দেয় যা প্রথম অবস্থায় এবং পরে সুরক্ষা দেয়।
আরো পড়ুনঃ শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে ১০টি কার্যকরী টিপস
আপনাকে ৪৮ থেকে ২৪ ঘন্টা বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করতে হবে। তাহলে মায়ের বুকে দুধ খাওয়ার ফলে যদি জন্ডিসের লক্ষণ গুলো দেখাতে তা ভালো হয়ে যাবে। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে যদি সে সমস্যা সমাধান বা না কমে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া গুরুত্ব অবস্থায় অনেক সময় শিশুদের রক্তের পরিবর্তন করতে হয়। এছাড়া মৃত্যু এবং মস্তিষ্কে স্থায়ীভাবে ক্ষতি হতে পারে।
শিশুর জন্ডিস চিকিৎসায় কোনটি অপ্রয়োজনীয় জানুন
শিশুর জন্ডিস চিকিৎসায় কোনটি অপ্রয়োজনীয় এটা জানা অপরিহার্য। কারণ প্রায় সকল নবজাতক শিশুরই কোনো না কোনো সময় জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেয়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় জন্ডিস হলে বা মায়ের বুকের দুধ খাওয়া থেকে জন্ডিস হলে তা নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায় এর জন্য তেমন কোনো চিকিৎসা সেবা দিতে হয় না। এছাড়া দ্রুততার সাথে চিকিৎসা নিতে হয়, তবে জন্ডিস হলে কিছু চিকিৎসা অপ্রয়োজনীয় মনে করা হয়।
- বেশি বেশি পানি পান করানো প্রয়োজন নেই।
- ফটোগ্রাফি করার প্রয়োজন নেই প্রাথমিক অবস্থায়।
- পারমোলজিক থেরাপি অপ্রয়োজনীয়।
- এক্সচেঞ্জ ট্রানসফিশন
নবজাতকের জন্ডিস নিয়ে সচরাচরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন এবং উত্তর
প্রশ্নঃ নবজাতকের জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা হয়?
উত্তরঃ সমস্যা হলে যেই লক্ষণগুলো দেখা দেয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শরীরের হলুদ রং এর মত হয়ে যায়। চোখ, মুখ এবং ত্বক হইতে পারে হলুদ। পাশাপাশি অতিরিক্ত ঘুম এবং খাবারে অনীহা দেখা যায়।
প্রশ্নঃ বুকের দুধ খাওয়ালে কি জন্ডিস বাড়ে?
উত্তরঃ আপনার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে জন্ডিস করার সম্ভাবনা থাকতে পারে। যদি আপনার এবং আপনার শিশুর রক্তের গ্রুপ ভিন্ন হয় সেই ক্ষেত্রে প্রথম অবস্থায় বা ২৪ ঘন্টা থেকে দুই সপ্তাহের ভিতরে এই লক্ষণ দেখা দেয়। সেই সময় আপনি দুধ খাওয়ানো বন্ধ রাখুন এবং পরবর্তীতে আবার খাওয়াতে পারেন।
প্রশ্নঃ নবজাতকের জন্ডিস কত দিনে ভালো হয়?
উত্তরঃ নবজাতকের জন্ডিস সাত দিন থেকে শুরু করে ১৪ দিনের ভিতরে ভালো হয়ে যায়। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ঘটে এবং স্বাভাবিকভাবেই ভালো হয়ে যায়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
প্রশ্নঃ নবজাতকের জন্ডিস হলে কি সূর্যের আলো ভালো?
উত্তরঃ নবজাতকের জন্ডিস হলে অল্প পরিমাণ উপকারী হয় কারণ যে সকল জন্ডিস সাধারণ অবস্থায় শতর্ক হয়ে থাকে তার জন্য আপনি রোদের আলো হালকা পরিমাণ ব্যবহার করতে পারেন। এতে নবজাতকের জন্ডিসের প্রবণতা কমে।
প্রশ্নঃ জন্ডিস হলে কি খাওয়া যাবে না জানুন?
উত্তরঃ জন্ডিসের সময় যে খাবার গুলো এড়িয়ে চলতে হবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চর্বিযুক্ত এবং ভাজা পুড়া খাবার। ফাস্টফুড জাতীয় খাবার এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত মাংস এবং উচ্চ চর্বিযুক্ত খবার থেকে বিরত থাকুন।
প্রশ্নঃ বুকের দুধে জন্ডিস কমাতে কতদিন লাগে জানো?
উত্তরঃ সাধারণত বুকের দুধের থেকে যে জন্ডিস হয় তা দুই দিন থেকে ১০ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। এর বেশি সময় গেলে আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসা নিতে হবে।
প্রশ্নঃ নবজাতকের জন্ডিসের ফেনোবারবিটাল ব্যবহার করা হয় কেন?
উত্তরঃ নবজাতকের লিভারের কার্যক্ষমতা উন্নত করে তার জন্মের ঠিক আগে, মায়েদের এই ব্যবহারটি করানো হয় যাতে বিলিরুবিন এর পরিমাণ কমে যেতে পারে যার ফলে জন্ডিস কমে।
প্রশ্নঃ গ্লুকোজ পানি কি জন্ডিসের জন্য ভালো?
উত্তরঃ নবজাতকের জন্ডিসের চিকিৎসার জন্য গ্লুকোজ দ্রবণ দিয়ে সম্পূর্ণ চিকিৎসা এবং সুবিধা জনক একটি কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে। এর সাথে অবিরাম মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর সুযোগ দেওয়া হয় যাতে খুব সহজেই জন্ডিস এর মাত্রা কমে।
প্রশ্নঃ হালকা জন্ডিস হলে কি শিশুর ঘুম আসে?
উত্তরঃ হালকা জন্ডিস হলে কখনো শিশু বেশি ঘুমিয়ে থাকতে চাই। এছাড়াও তারা বুকের দুধ খেতে উৎসাহ পায় না বা খেতে চায় না কোন কিছু। সেক্ষেত্রে দুই থেকে তিন ঘন্টা পর পর জাগিয়ে তাকে খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। যা হালকা জন্ডিস হলে শিশুর ঘুম ঘুম ভাব দূর করে।
প্রশ্নঃ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্ডিস হলে কি সূর্যের আলো ভালো?
উত্তরঃ প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে সূর্যের আলো সুবিধাজনক প্রভাব দেখায় না এতে বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব হতে পারে। এর কারণে বিলিরুবিনের মাত্রা বাড়তে পারে। এবং জন্ডিস প্রখর আকার ধারণ করতে পারে যা লিভারকে সরাসরি আক্রান্ত করে ফেলে এবং নানান ধরনের জন্ডিসের লক্ষণ দেখা যায়।
নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় বিষয়ে শেষ মন্তব্য
নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় বিষয়ে যদি আপনি ব্যবহার করেন তাহলে খুব সহজেই তা বুঝতে পারবেন। এটা কোন ধরনের জন্ডিস। সাধারণত নবজাতকের জন্মের ২৪ ঘন্টা থেকে ৪৮ ঘন্টার ভিতরে দেখা দিতে পারে। এটাকে নর্মাল হিসেবে মনে করা হয় যা দুই সপ্তাহের মধ্যে ধীরে ধীরে ভালো হয়ে যায়। তবে এই জন্ডিস হলে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।
নবজাতকের জন্ডিস হলে মা যদি সচেতন হয় তাহলে সেই জন্ডিসের লক্ষণ গুলো খুব সহজে বুঝতে পারবে। এবং তার প্রতিকার মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। পাশাপাশি প্রয়োজনেই অবস্থা যদি জটিল মনে হয় সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা এবং থেরাপি পূরণ করতে পারবে। যাতে নবজাতক সহজেই সুস্থ হয়ে যেতে পারে। আশা করি আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনি নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করিনি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন।
মুক্তআঁখি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url